Wellcome to National Portal
কৃষি তথ্য সার্ভিস (এআইএস) গণপ্রজাতন্ত্রী বাংলাদেশ সরকার
Text size A A A
Color C C C C

মুজিববর্ষে স্বাধীনতার সুবর্ণজয়ন্তী : দ্যুতিময় কৃষি

মুজিববর্ষে স্বাধীনতার সুবর্ণজয়ন্তী : দ্যুতিময় কৃষি

কৃষিবিদ মোঃ আসাদুল্লাহ১ কৃষিবিদ মো. আবু সায়েম২

স্বাধীনতার অর্ধশত বছরের মাইলফলকে বাংলাদেশ। তলাবিহীন ঝুড়ির অপবাদ পাওয়া ছোট্ট এই ব-দ্বীপটি আজ স্বল্পোন্নত দেশ থেকে বেরিয়ে উন্নয়নশীল দেশ হওয়ার চূড়ান্ত সুপারিশ পেয়েছে। ১৯৭৩ সালে মানুষের মাথাপিছু আয় ছিল যেখানে ৭০ ডলার, ২০২১ সালে সেটি ২ হাজার ২২৭ ডলারে, বাংলাদেশি মুদ্রায় তা বছরে ১ লাখ ৮৮ হাজার ৮৭৩ টাকা। গত বছর করোনা শুরুর আগেও মাথাপিছু আয় ছিল ২ হাজার ৬৫ ডলার। করোনার ধকলে থেমে থাকেনি অর্থনীতির চাকা। মাথাপিছু আয়সহ অর্থনীতির বিভিন্ন সূচকে ঊর্ধ্বগতি এসেছে। একমাত্র কৃষিখাতের ঈর্ষণীয় সাফল্যের সুবাতাসের কারণ বলে মনে করেন বাংলাদেশ ব্যাংকের সাবেক গভর্নর ও বিশিষ্ট অর্থনীতিবিদ ড. আতিউর রহমান। স্বাধীনতার পর দেশের শতকরা ৮৫ ভাগ মানুষ প্রত্যক্ষ ও পরোক্ষ কৃষির ওপর নির্ভরশীল ছিল, বর্তমানে এ হার ৪০ দশমিক ৬ শতাংশ। ১৯৭২-৭৩ সালে জিডিপিতে কৃষির অবদান ছিল ৫৮ দশমিক ০৪ শতাংশ, ২০১৯-২০ সালে জিডিপিতে কৃষির অবদান ১৩ দশমিক ৩০ শতাংশ। জিডিপিতে কৃষি খাতের অবদান কমলেও মোট অবদান বেড়েছে প্রায় ৬ গুণ। এক দশক ধরে আমাদের অর্থনীতি রয়েছে উচ্চ প্রবৃদ্ধির পথে। আর ঠিক এ সময়েই জাতি উদ্যাপন করছে জাতির পিতা বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানের জন্মশতবার্ষিকী ও স্বাধীনতার ৫০ বছরপূর্তি তথা সুবর্ণজয়ন্তী। মুজিববর্ষে জাতির পিতা বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমান এর ৪৬তম শাহাদতবার্ষিকীতে বঙ্গবন্ধুসহ তাঁর পরিবারের সব শহিদের    গভীরভাবে স্মরণ করছি এবং জানাই বিনম্র শ্রদ্ধা।
স্বাধীনতার পর ৫০ বছরে নির্দিষ্ট হারে আবাদি জমি কমে যাওয়া, একই সাথে জনসংখ্যা আড়াই গুণ বৃদ্ধি পেলেও ফসল উৎপাদন বেড়েছে প্রায় পাঁচ গুণ। বর্তমানে বাংলাদেশের ধানের উৎপাদন সাড়ে তিন গুণ, সবজি পাঁচ গুণ, ভুট্টার উৎপাদন বেড়েছে আঠারো গুণ আর আলুর উৎপাদন বেড়েছে বারো গুণ। দুই যুগ আগেও দেশের অর্ধেক এলাকায় একটি ও বাকি এলাকায় দুটি ফসল হতো। বর্তমান দেশে বছরে গড়ে দুটি ফসলের উৎপাদন হচ্ছে। আয়তনে ছোট ও ঘন-বসতিপূর্ণ হলেও স্বাধীনতা-পরবর্তী ৫০ বছরে সীমিত সাধ্য নিয়েই কৃষিখাতে অন্তত দশটির অধিক ক্ষেত্রে বিশ্বে শীর্ষ ১০ দেশের তালিকায় রয়েছে বাংলাদেশ। কৃষিতে বিশ্বে বাংলাদেশের অবস্থান পাট রপ্তানিতে ১ম, পাট ও কাঁঠাল উৎপাদনে ২য়, ধান ও সবজি উৎপাদনে ৩য়, আম ও আলু উৎপাদনে ৭ম, পেয়ারা উৎপাদনে ৮ম এবং সামগ্রিক ফল উৎপাদনে বিশ্বে ২৮তম স্থানে। এরই মধ্যে দেশি ও তোষা পাট, পাটসহ পাঁচ শতাধিক ফসলের ক্ষতিকর একটি ছত্রাক ও ধৈঞ্চার জীবনরহস্য উন্মোচিত হয়েছে। ভৌগোলিক নির্দেশক (জিআই) পণ্য হিসেবে স্বীকৃতি পেয়েছে চাঁপাইনবাবগঞ্জের খিরসাপাত আম, দিনাজপুরের কাটারিভোগ চাল ও কালিজিরা চাল। ২০১৩ সালে বিশ্বে প্রথমবারের মতো জিঙ্কসমৃদ্ধ ধানের জাত উদ্ভাবন করেন বাংলাদেশের কৃষি গবেষকরা। উন্নয়নশীল দেশগুলোর মধ্যে প্রতিকূল পরিবেশসহিষ্ণু ধানের জাত উদ্ভাবনের দিক থেকেও বাংলাদেশ শীর্ষ স্থানে রয়েছে। ধানের লবণাক্তসহিষ্ণু ১৩টি জাত, খরা সহনশীল ১০টি জাত, জলমগ্নতাসহিষ্ণু ৬টি জাত, উপকূলীয় জোয়ার-ভাটা অঞ্চলের উপযোগী ৩টি, হাওর অঞ্চলের উপযোগী ১১টি জাত, জিঙ্কসমৃদ্ধ ৭টি, কম গ্লাইসেমিক ইনডেক্স (জিআই) সমৃদ্ধ ৩টি এবং সুগন্ধি ৯টি জাতের উদ্ভাবন করে বিশ্বে অনন্য নজির সৃষ্টি করেছে বাংলাদেশে ধান বিজ্ঞানীরা। ২০১৩ সালে জেনেটিক ইঞ্জিনিয়ারিং প্রযুক্তি ব্যবহার করে বিটি বেগুনের ৪টি জাত উদ্ভাবন ও সম্প্রসারণ করা হয়েছে। এছাড়া বিটি তুলা উদ্ভাবনের কাজ ও আলুর নাবি ধ্বসা রোগের প্রতিরোধী জিন প্রতিস্থাপনের কাজ এগিয়ে চলছে।
কৃষি যান্ত্রিকীকরণ এখন সময়ের দাবি। স্বাধীনতার পরবর্তীকালে সেচযন্ত্রের ব্যবহার ছিল প্রায় ১ লাখ, বর্তমানে প্রায় ১৬ গুণ বৃদ্ধি পেয়ে ১৫ লাখ ৮৫ হাজার অধিক সেচযন্ত্র ব্যবহার হচ্ছে। ৭৬ দশমিক ১৬ লাখ হেক্টর জমিতে সেচ সুবিধা দেয়া হচ্ছে যা কিনা মোট আবাদি জমির শতকরা ৮৬ দশমিক ৫৭ ভাগ। স্বাধীনতা উত্তরকালে যান্ত্রিক চাষাবাদ ছিল না বললেই চলে। হালের গরু দিয়েই চাষাবাদ হতো। কয়েক দশকে আগেও শারীরিক শ্রম দিয়েই জমি চাষ ও মাড়াই হতো। বর্তমানে সিংহভাগ জমিই   কৃষিযন্ত্রের মাধ্যমে চাষ হচ্ছে। বর্তমান সরকারের বিভিন্ন কৃষি যান্ত্রিকীকরণ কর্মসূচির ও ৫০-৭০ শতাংশ ভর্তুকির ফলে দেশে কৃষি জমি চাষে প্রায় ৯০%, সেচকাজে ৯৫%, আগাছাদমনে ৬৫%, কীটনাশক প্রয়োগে ৮০% এবং ফসল মাড়াইয়ের কাজে ৭০% যান্ত্রিকীকরণ সম্ভব হয়েছে। টেকসই যান্ত্রিকীকরণে সৌরশক্তির ব্যবহারও বাড়ছে উল্লেখযোগ্য হারে।
ভিশন ২০২১ তথ্য-প্রযুক্তি খাতে এনেছে এক বৈপ্লবিক পরিবর্তন। কৃষিতে এর ছোঁয়া ব্যতিক্রম নয়। দেশে ডিজিটাল কৃষি তথা ই-কৃষির প্রচলন করা হয়েছে। কৃষি তথ্য সার্ভিসের কৃষি কল সেন্টারের (১৬১২৩) মাধ্যমে কৃষকেরা সরাসরি বিশেষজ্ঞের পরামর্শ গ্রহণ করছে। কৃষকদের কৃষি আবহাওয়ার পূর্বাভাস জানিয়ে দেয়া হচ্ছে। কৃষি বিষয়ক বিভিন্ন মোবাইল অ্যাপ্লিকেশনের মাধ্যমে ফসল উৎপাদনে সহজেই সিদ্ধান্ত গ্রহণ করতে পারছে। ইন্টারেকটিভ কৃষি বিষয়ক ওয়েবসাইটগুলো বিপুল তথ্য ভাণ্ডারের উৎস হিসেবে কাজ করছে। ওয়েব অ্যাপ্লিকেশনের মাধ্যমে অনলাইন সার সুপারিশসহ অন্যান্য পরামর্শ গ্রহণ অনেক সহজ হয়েছে। গ্রামপর্যায়ে কৃষিবিষয়ক পরামর্শ সেবা দেয়ার জন্য ৪৯৯টি কৃষি তথ্য ও যোগাযোগ কেন্দ্র স্থাপন করা হয়েছে। ই-পুর্জির মাধ্যমে আখ চাষিদের আখের মূল্য পরিশোধ করা হচ্ছে। কৃষকের একাউন্টে সরাসরি ভর্তুকির টাকা প্রেরণ, ১০ টাকায় ব্যাংক হিসাব খোলা, মোবাইল অ্যাপের মাধ্যমে সরকারি গুদামে ধান-চাল ক্রয়, এছাড়াও কৃষিভিত্তিক অনেক ওয়েব অ্যাপ্লিকেশন ও সফটওয়ার ব্যবহার হচ্ছে। এক যুগ আগেও অনেকের কাছে এসব কথা স্বপ্নের মতো মনে হতো, কিন্তু বাস্তব স্বপ্নকেও ছাড়িয়ে গেছে। জাতীয় ও আঞ্চলিক রেডিও স্টেশন হতে কৃষি বিষয়ক কার্যক্রম প্রচারের পাশাপাশি ১৮টি কমিউনিটি রেডিও হতে কৃষি বিষয়ক তথ্য প্রচার করা হচ্ছে। বিটিভির পাশাপাশি বেসরকারি চ্যানেলগুলোতে কৃষি বিষয়ক সংবাদ ও ম্যাগাজিন অনুষ্ঠান নিয়মিত সম্প্রচার হচ্ছে। সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যম যেমন- ফেসবুক, ইউটিউব, বিভিন্ন পেইজে অথবা গ্রুপেও আধুনিক কৃষি তথ্য পাওয়া যাচ্ছে। বিটিআরসি তথ্য মতে ডিসেম্বর ২০২০ পর্যন্ত ইন্টারনেট ব্যবহারকারীর সংখ্যা ১১ কোটির কিছু বেশি, এর মধ্যে মোবাইল ইন্টারনেট ব্যবহারকারীর সংখ্যা প্রায় ১০ কোটি ছাড়িয়ে গেছে। ক্যাটালিস্টের এক পরিসংখানে দেখা যায়, ৮৪ শতাংশ গ্রামীণ কৃষক মোবাইল ফোন ব্যবহার করে। করোনা অতিমারির সময় সরাসরি কৃষকের উৎপাদিত পণ্য কেনাবেচার জন্য বাংলাদেশে সর্বপ্রথম উন্মুক্ত কৃষি মার্কেটপ্লেস ‘ফুড ফর ন্যাশন’ চালু করা হয়।
কৃষি বিপ্লবের এ বুনিয়াদ রচনা করেছিলেন জাতির পিতা বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমান। বঙ্গবন্ধুর স্পর্শধন্য ২১ দফার বেশ কয়েকটি দফাই ছিল কৃষি ও কৃষকের ভাগ্যোন্নয়নের অন্যতম দাবি। বঙ্গবন্ধু অনুধাবন করেছিলেন, মেধাবীরা কৃষি শিক্ষায় আসলে এবং শিক্ষা শেষে গবেষণা ও সম্প্রসারণসহ বিভিন্ন সেক্টরে প্রবেশ করে আমূল পাল্টে দিতে পারে পুরাতন কৃষি। তাই ১৯৭৩ সালের ১৩ ফেব্রুয়ারি চাকরি ক্ষেত্রে কৃষিবিদদের প্রথম শ্রেণির মর্যাদা দানের মধ্য দিয়ে বঙ্গবন্ধু যুগান্তকারী পদক্ষেপ নিয়েছিলেন। স্বাধীন বাংলাদেশে তিনি দ্বিতীয় বিপ্লব তথা কৃষি বিপ্লবের ডাক দিয়েছিলেন। তাঁর দ্বিতীয় বিপ্লবের মর্মকথা ছিল উৎপাদন বাড়াও। তিনি বলেছিলেন, ‘দেশের কৃষি বিপ্লব সাধনের জন্য কৃষকদের কাজ করে যেতে হবে। বাংলাদেশের এক ইঞ্চি জমিও অনাবাদি রাখা যাবে না।’ খাদ্যে স্বয়ম্ভরতা অর্জনের লক্ষ্য নিয়ে জাতির পিতা বলেছিলেন, ‘খাদ্যের জন্য অন্যের ওপর নির্ভর করলে চলবে না। আমাদের নিজেদের প্রয়োজনীয় খাদ্য আমাদেরই উৎপাদন করতে হবে। আমরা কেন অন্যের কাছে খাদ্য ভিক্ষা চাইব। আমাদের উর্বর জমি, আমাদের অবারিত প্রাকৃতিক সম্পদ, আমাদের পরিশ্রমী মানুষ, আমাদের গবেষণা সম্প্রসারণ কাজে সমন্বয় করে আমরা খাদ্যে স্বয়ম্ভরতা অর্জন করব। এটা শুধু সময়ের ব্যাপার।’ পিতার অনুসরণে মাননীয় প্রধানমন্ত্রী জননেত্রী শেখ হাসিনার সততা, আন্তরিকতা ও কৃষকদের প্রতি গভীর মমত্ববোধ উৎসারিত কৃষিবান্ধব নীতি কৌশল খাদ্যে স্বয়ম্ভরতার ঊর্ধ্বগতি বিপ্লবের রূপান্তরিত হয়েছে। পুষ্টি নির্ভর মেধাবী জাতি গঠনে দেশকে এগিয়ে নিয়ে যাচ্ছেন। করোনা সংক্রমণের কারণে যখন দেশের সবকিছু স্থবির, তখনও সচল  কৃষির চাকা। দুঃসময়ে কৃষিই দেখাচ্ছে সম্ভাবনার পথ। মাননীয় কৃষিমন্ত্রী ড. মোঃ আব্দুর রাজ্জাক এমপি বলেছেন, চলতি বোরো মৌসুমে গত ৫০ বছরের সকল রেকর্ডকে ভেঙ্গে ২ কোটি ৭ লাখ মেট্রিক টনের অধিক ফলন হয়েছে যার আন্তর্জাতিক বাজার মূল্য প্রায় ৭৫ হাজার কোটি টাকা। এমন কি কোভিড-১৯ এর কারণে বিশ্ব বাজার মন্দাভাব থাকলেও এপ্রিল ২০২১ পর্যন্ত কৃষিপণ্য রপ্তানি আয় ৯.১% বেড়ে ৮২৪ দশমিক ৫৯ মিলিয়ন মার্কিন ডলার হয়েছে। শুধু করোনাই নয় গত ৫০ বছরে ঝড়, জলোচ্ছ্বাস বন্যা, শীত, খরা, তাপদাহসহ জলবায়ু পরিবর্তনের ধাক্কা সামলিয়ে কৃষি বারবার ঘুরে দাঁড়িয়েছে। এসেছে বিস্ময়কর সাফল্য ও অভাবনীয় উন্নতি। এক সময় বলা হতো দুধে-ভাতে বাঙালি কিংবা মাছে-ভাতে বাঙালি। এখন শুধু দুধে-ভাতে কিংবা মাছে-ভাতে সীমিত নয়, পুষ্টিতে বাঙালি হিসেবে এদেশ বিশ্ব দরবারে প্রশংসিত হচ্ছে ও পরিচিতি লাভ করছে।
১মহাপরিচালক, কৃষি সম্প্রসারণ অধিদপ্তর, ২অতিরিক্ত উপপরিচালক (এলআর), ডিএই ও প্রেষণে পিএইচডি গবেষক, মোবাইল : ০১৭১৯৫৪৭১৭৯, ই-মেইল  : sayemdae@yahoo.com

 


COVID19 Movement Pass Online Police Clearance BD Police Help line Expatriate Cell Opinion or Complaint NIS Bangladesh Police Hot Line Number Right to Information PIMS Police Cyber Support for Women BPWN Annual Training Workshop Achievement & Success PHQ Invitation Card
Press Release Recruitment Information Procurement / Tender Notice Legal Instrument Innovation Corner Detective Magazine Bangladesh Football Club Diabetes-Covid19 Exam Results Accident Info Important Forms

Apps

icon icon icon icon icon icon